প্রযুক্তি শেখার প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব ও সহজ উপায় !

technology

বন্ধুরা,

আজ আমরা এমন একটি বিষয় নিয়ে কথা বলব যা আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত – প্রযুক্তি। প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে আমরা নিজেদের কীভাবে প্রাসঙ্গিক রাখব, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করব এবং জীবনকে আরও সহজ করব, তার চাবিকাঠি নিহিত আছে প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জনের মধ্যে।

কেন প্রযুক্তি শেখা এত গুরুত্বপূর্ণ? (প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব)

১. কর্মসংস্থান ও ক্যারিয়ারের সুযোগ: বর্তমানে প্রতিটি শিল্পেই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। অফিসিয়াল কাজ থেকে শুরু করে উৎপাদন, চিকিৎসা, শিক্ষা – সবকিছুতেই প্রযুক্তির প্রয়োজন। কম্পিউটার চালনা, ডেটা অ্যানালাইসিস, কোডিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, সাইবার সিকিউরিটি – এই ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষ লোকের চাহিদা আকাশচুম্বী। প্রযুক্তিগত জ্ঞান আপনাকে বেকারত্বের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে এবং উচ্চ বেতনের চাকরির সুযোগ করে দেয়।

২. ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও দৈনন্দিন জীবনের সুবিধা: প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে অনেক সহজ করে তুলেছে। অনলাইন ব্যাংকিং, টিকিট কাটা, ভিডিও কলিং, গুগল ম্যাপ ব্যবহার করা – এই সবই প্রযুক্তির অবদান। স্মার্টফোনের সঠিক ব্যবহার থেকে শুরু করে কম্পিউটার বা ল্যাপটপে প্রয়োজনীয় কাজগুলো সহজে করতে পারা আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

৩. ব্যবসার প্রসার ও উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ: ছোট ব্যবসা থেকে শুরু করে বৃহৎ শিল্প – সবার জন্যই ডিজিটাল উপস্থিতি অপরিহার্য। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি, অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে আপনি আপনার ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারেন। প্রযুক্তির জ্ঞান আপনাকে নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সাহায্য করবে।

৪. তথ্যের সহজলভ্যতা ও জ্ঞান অর্জন: ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে তথ্যের এক বিশাল ভান্ডার আপনার হাতের মুঠোয়। যেকোনো বিষয় সম্পর্কে জানতে, নতুন কিছু শিখতে, বা নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে ইন্টারনেট একটি অসাধারণ মাধ্যম।

৫. ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), মেশিন লার্নিং, ব্লকচেইন, ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) এর মতো প্রযুক্তিগুলো আমাদের সমাজকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে প্রযুক্তি জ্ঞান অপরিহার্য।

প্রযুক্তি শেখার সহজ উপায় (কোথা থেকে শুরু করবেন?)

প্রযুক্তি শেখা মানেই যে কম্পিউটার বিজ্ঞানী হতে হবে, এমনটা নয়। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করতে পারেন।

১. বেসিক কম্পিউটার ও ইন্টারনেট জ্ঞান:

* শুরু করুন: কম্পিউটার চালু ও বন্ধ করা, ফাইল ও ফোল্ডার তৈরি ও সংরক্ষণ করা, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্টের মতো মৌলিক অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা শিখুন।

* ইন্টারনেট: ই-মেইল ব্যবহার, গুগল সার্চ করা, তথ্য খোঁজা এবং অনলাইন ফর্ম পূরণ করা শিখুন।

* কোথায় শিখবেন: স্থানীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, অনলাইন টিউটোরিয়াল (যেমন: YouTube, Google Basics), পরিবারের শিক্ষিত সদস্য বা বন্ধুদের সাহায্য নিতে পারেন।

২. অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম:

* কোর্সেরা (Coursera), এডেক্স (edX), ইউডেমি (Udemy), খান একাডেমি (Khan Academy): এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ে বিনামূল্যে এবং পেইড কোর্স পাওয়া যায়। ডেটা সায়েন্স, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং থেকে শুরু করে প্রোগ্রামিং এর মতো কোর্সগুলো বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হয়।

* বাংলা কন্টেন্ট: বর্তমানে অনেক বাংলাদেশি ইউটিউবার এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বাংলায় প্রযুক্তি বিষয়ক টিউটোরিয়াল তৈরি করছেন (যেমন: Ten Minute School, Shikhbe Shobai, Bohubrihi)।

৩. ইউটিউব টিউটোরিয়াল:

* যেকোনো নির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত সমস্যা বা দক্ষতা শিখতে YouTube একটি চমৎকার উৎস। "How to use Photoshop," "Python tutorial for beginners" লিখে সার্চ করলেই হাজার হাজার ভিডিও পেয়ে যাবেন।

৪. সোশ্যাল মিডিয়াকে শেখার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার:

* ফেসবুক: বিভিন্ন শিক্ষামূলক ফেসবুক গ্রুপ ও পেজে যুক্ত হয়ে আপনি নতুন তথ্য জানতে পারবেন, প্রশ্ন করতে পারবেন এবং আলোচনায় অংশ নিতে পারবেন। আমার ফেসবুক পেজেও যেমন: Bangla Tech Tutorials আমি বিভিন্ন প্রযুক্তি টিপস ও আপডেট শেয়ার করি।

* ইউটিউব: এটি প্রযুক্তি শেখার জন্য একটি বিশাল ভান্ডার। অসংখ্য চ্যানেল রয়েছে যারা টিউটোরিয়াল, রিভিউ এবং প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ প্রদান করে। আমার ইউটিউব চ্যানেলও যেমন: Bangla Tech Tutorials নিয়মিত নতুন ভিডিও নিয়ে হাজির হয় যা আপনাকে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করবে।

* টিকটক: ছোট ভিডিও ফরম্যাটের মাধ্যমে দ্রুত এবং সহজে প্রযুক্তিগত টিপস, শর্টকাট বা মজার তথ্য জানতে পারবেন। আমার টিকটক প্রোফাইলেও যেমন: Bangla Tech Tutorials) আমি সংক্ষিপ্ত ও তথ্যপূর্ণ প্রযুক্তি কন্টেন্ট পোস্ট করি।

৫. প্র্যাকটিক্যাল অ্যাপ্লিকেশন:

* শেখার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো যা শিখছেন তা প্রয়োগ করা। ছোটখাটো প্রজেক্ট তৈরি করুন, যেমন: নিজের জন্য একটি ব্লগ তৈরি করা, একটি ছোট ব্যবসা পরিকল্পনার জন্য এক্সেল শীট তৈরি করা, বা একটি সহজ ওয়েবপেজ ডিজাইন করা।

৬. ব্লগ ও টেক ওয়েবসাইট অনুসরণ:

* বিভিন্ন টেকনোলজি ব্লগ (যেমন: টেকক্রাঞ্চ, ম্যাশেবল) এবং বাংলাদেশি টেক ওয়েবসাইটগুলো নিয়মিত পড়ুন। এতে নতুন প্রযুক্তির খবর ও ট্রেন্ড সম্পর্কে অবগত থাকবেন।

৭. কমিউনিটিতে যুক্ত হওয়া:

* বিভিন্ন অনলাইন ফোরাম (যেমন: রেডিট), ফেসবুক গ্রুপ বা স্থানীয় টেক মিটআপে অংশ নিন। প্রশ্ন করুন, অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন এবং নিজের জ্ঞান শেয়ার করুন।

৮. ধৈর্য ও অনুশীলন:

* প্রযুক্তি শেখা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। রাতারাতি আপনি সবকিছু শিখে ফেলবেন না। নিয়মিত অনুশীলন করুন এবং নতুন কিছু শেখার আগ্রহ ধরে রাখুন। ভুল করা স্বাভাবিক, ভুল থেকেই শিখুন।

প্রযুক্তি আর কেবল কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের বিষয় নয়; এটি এখন আমাদের সবার জন্য এক অপরিহার্য দক্ষতা। আজই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী প্রযুক্তি শেখার যাত্রা শুরু করুন। মনে রাখবেন, আজকের ছোট একটি পদক্ষেপই আপনাকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে তুলবে!

শুভেচ্ছান্তে,

লেখক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

×