পৈতৃক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার: আইন কী বলে এবং বাস্তবতা কতটা ভিন্ন?

পৈতৃক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার: আইন ও বাস্তবতা

পৈতৃক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার: আইন ও বাস্তবতা

আমাদের সমাজে প্রায়শই একটি বেদনাদায়ক কিন্তু পরিচিত প্রশ্ন শোনা যায়, “তোমার তো বিয়ে হয়ে স্বামীর ঘর হয়েছে, বাবার সম্পত্তিতে আবার অধিকার কিসের?” এই একটি বাক্যই যেন বাংলাদেশের হাজারো নারীর আইনসম্মত ও জন্মগত অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।

দেশের সর্বোচ্চ আইন, সংবিধান, নারী-পুরুষকে সমান অধিকার দিলেও পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকারের প্রশ্নে নারীরা আজও বঞ্চনা এবং অবহেলার শিকার।

সাংবিধানিক অধিকার বনাম সামাজিক বাস্তবতা

বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদ দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করে যে, সকল নাগরিক আইনের চোখে সমান এবং ২৮ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না। কিন্তু এই সাংবিধানিক সুরক্ষার পরেও সামাজিক চাপ, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এবং দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার ভয়ে বহু নারী তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন।

ধর্মীয় আইন অনুযায়ী নারীর উত্তরাধিকার

মুসলিম আইনে নারীর অংশ

বাংলাদেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ‘মুসলিম পার্সোনাল ল (শরীয়ত) অ্যাপ্লিকেশন অ্যাক্ট, ১৯৩৭’ এবং ‘মুসলিম উত্তরাধিকার অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১’ অনুযায়ী পৈতৃক সম্পত্তিতে নারীদের সুনির্দিষ্ট অংশ নির্ধারণ করা আছে। এই আইন অনুযায়ী, একজন মেয়ে তার ভাইয়ের তুলনায় অর্ধেক সম্পত্তি লাভ করেন। ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে পরিস্থিতিভেদে অংশের পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে।

হিন্দু আইনে নারীর অধিকার

হিন্দু নারীদের সম্পত্তির অধিকার মূলত ‘হিন্দু উইমেন্স রাইট টু প্রপার্টি অ্যাক্ট, ১৯৩৭’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তবে আইনটি বেশ পুরোনো হওয়ায় এবং এতে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় এটি সমকালীন চাহিদা পুরোপুরি মেটাতে পারে না। বাংলাদেশে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংস্কার ও আধুনিকায়নের দাবি দীর্ঘদিনের।

কেন নারীরা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন?

বাস্তব চিত্রটি বেশ জটিল। এর পেছনে কিছু বহুস্তরীয় কারণ বিদ্যমান:

  • সামাজিক ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা: অনেক পরিবারেই বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে যে, মেয়েরা বিয়ে হয়ে গেলে পরের বাড়ির সদস্য হয়ে যায়, তাই বাবার সম্পত্তিতে তাদের কোনো দাবি থাকা উচিত নয়।
  • নিকটাত্মীয় ও ভাইদের অন্যায্য হস্তক্ষেপ: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাইয়েরা বা অন্য পুরুষ আত্মীয়রা বিভিন্ন কৌশল, চাপ প্রয়োগ বা জালিয়াতির মাধ্যমে বোনদের অংশ দখল করে নেন।
  • আইনি জ্ঞানের অভাব ও আর্থিক সংকট: অধিকাংশ নারীই তাদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে পুরোপুরি জানেন না। জানলেও, মামলা পরিচালনার মতো আর্থিক সামর্থ্য বা মানসিক জোর তাদের থাকে না।
  • পারিবারিক সালিশের চাপ: প্রায়শই পারিবারিক বা সামাজিক সালিশের মাধ্যমে নারীদের সামান্য কিছু অর্থ দিয়ে বা আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তাদের অধিকার ত্যাগে বাধ্য করা হয়।
  • বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা: মামলা করা মানেই দীর্ঘ সময় ও অর্থের অপচয়—এই ভয়ে বহু নারী আইনি লড়াইয়ের পথে হাঁটার সাহস পান না।

আইনি প্রতিকার লাভের উপায়

অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে হতাশ না হয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক প্রস্তুতি এবং কিছু ধাপ অনুসরণ।

১. মামলার প্রস্তুতি: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

আইনি লড়াই শুরু করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র সংগ্রহ করা আবশ্যক:

  • উত্তরাধিকারীর পিতা/মাতার মৃত্যু সনদ।
  • সম্পত্তির মালিকানার প্রমাণপত্র (যেমন: সাফ কবলা দলিল, সিএস/এসএ/আরএস খতিয়ান, নামজারি বা মিউটেশন খতিয়ান)।
  • ওয়ারিশান সনদ (স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন থেকে সংগ্রহ করতে হয়)।
  • দাবিযোগ্য সম্পত্তির পূর্ণাঙ্গ তালিকা।
  • প্রয়োজনে পারিপার্শ্বিক সাক্ষী হিসেবে প্রতিবেশী বা সম্পর্কের আত্মীয়দের সমর্থন।

এই সকল কাগজপত্র একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে প্রস্তুত রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

২. আদালতে মামলা পরিচালনার ধাপ

  • আদালত নির্ধারণ: সাধারণত বাটোয়ারা বা অংশীদারিত্বের মামলা এখতিয়ারসম্পন্ন দেওয়ানী আদালতে (সহকারী জজ কোর্ট) দায়ের করতে হয়।
  • দাবি বা আরজি দাখিল: আইনজীবী মারফত সম্পত্তির ওপর নিজের দাবি প্রতিষ্ঠা করে লিখিত অভিযোগ (আরজি) আদালতে জমা দিতে হয়।
  • প্রতিপক্ষের জবাব: আদালত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিবাদীকে তলব করলে, তিনি তার লিখিত জবাব দাখিল করেন।
  • সাক্ষ্য ও প্রমাণাদি যাচাই: আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনেন এবং তাদের উপস্থাপিত দলিলপত্র ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ ও যাচাই করেন।
  • স্থানীয় তদন্ত: প্রয়োজনে আদালত সরেজমিনে সম্পত্তির অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য তদন্ত কমিশন গঠন করতে পারেন।
  • চূড়ান্ত রায়: সকল সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে আদালত তার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন।

রায় পাওয়ার পর সেই রায়ের বলে সম্পত্তির দখল বুঝে পেতে প্রয়োজনে উচ্ছেদ বা দখল পুনরুদ্ধারের জন্য আলাদা মামলা (Execution Case) করার প্রয়োজন হতে পারে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইন ও মামলার উদাহরণ

নারীর সম্পত্তি অধিকার সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইন হলো:

  • মুসলিম পার্সোনাল ল’ (শরীয়ত) অ্যাপ্ট, ১৯৩৭
  • মুসলিম উত্তরাধিকার অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১
  • সাকসেশন অ্যাক্ট, ১৯২৫
  • হিন্দু উইমেন্স রাইট টু প্রপার্টি অ্যাক্ট, ১৯৩৭
  • দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ (Civil Procedure Code, 1908)

বাস্তব উদাহরণ থেকে দেখা যায়, আইনগতভাবে লড়াই করলে সফলতা সম্ভব। যেমন: ফাতেমা বেগম বনাম তার ভাইয়েরা (ঢাকা সিভিল কোর্ট, ২০১৮) মামলায় ভাইয়েরা বোনকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলেও, আদালত দলিলপত্র যাচাই করে তার ন্যায্য অংশ ফিরিয়ে দেওয়ার রায় দেন।

কোথায় পাবেন আইনি সহায়তা?

আর্থিক অসচ্ছলতা বা অন্য কোনো কারণে মামলা পরিচালনায় অক্ষম নারীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আইনি সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। কিছু উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলো:

নারীর পৈতৃক সম্পত্তিতে অধিকার প্রতিষ্ঠা শুধু একটি আইনি লড়াই নয়; এটি তার অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক মর্যাদা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। সচেতনতা এবং সাহসের মাধ্যমে এই পথে এগিয়ে যাওয়াই সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ার অন্যতম শর্ত।

লেখক ও সূত্র প্রসঙ্গ: এই ব্লগ পোস্টটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের তথ্যের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। মূল প্রতিবেদনের লেখক ছিলেন শিক্ষানবিশ আইনজীবী অর্ক রায়। আইনি তথ্যের সংবেদনশীলতা ও নির্ভুলতা রক্ষার্থে মূল প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

আমাদের সমাজে প্রায়শই একটি বেদনাদায়ক কিন্তু পরিচিত প্রশ্ন শোনা যায়, “তোমার তো বিয়ে হয়ে স্বামীর ঘর হয়েছে, বাবার সম্পত্তিতে আবার অধিকার কিসের?” এই একটি বাক্যই যেন বাংলাদেশের হাজারো নারীর আইনসম্মত ও জন্মগত অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। দেশের সর্বোচ্চ আইন, সংবিধান, নারী-পুরুষকে সমান অধিকার দিলেও পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকারের প্রশ্নে নারীরা আজও বঞ্চনা এবং অবহেলার শিকার।
সাংবিধানিক অধিকার বনাম সামাজিক বাস্তবতা
বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদ দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করে যে, সকল নাগরিক আইনের চোখে সমান এবং ২৮ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না। কিন্তু এই সাংবিধানিক সুরক্ষার পরেও সামাজিক চাপ, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এবং দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার ভয়ে বহু নারী তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন।

ধর্মীয় আইন অনুযায়ী নারীর উত্তরাধিকার

মুসলিম আইনে নারীর অংশ: বাংলাদেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ‘মুসলিম পার্সোনাল ল (শরীয়ত) অ্যাপ্লিকেশন অ্যাক্ট, ১৯৩৭’ এবং ‘মুসলিম উত্তরাধিকার অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১’ অনুযায়ী পৈতৃক সম্পত্তিতে নারীদের সুনির্দিষ্ট অংশ নির্ধারণ করা আছে। এই আইন অনুযায়ী, একজন মেয়ে তার ভাইয়ের তুলনায় অর্ধেক সম্পত্তি লাভ করেন। ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে পরিস্থিতিভেদে অংশের পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে।

হিন্দু আইনে নারীর অধিকার: হিন্দু নারীদের সম্পত্তির অধিকার মূলত ‘হিন্দু উইমেন্স রাইট টু প্রপার্টি অ্যাক্ট, ১৯৩৭’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তবে আইনটি বেশ পুরোনো হওয়ায় এবং এতে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় এটি সমকালীন চাহিদা পুরোপুরি মেটাতে পারে না। বাংলাদেশে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংস্কার ও আধুনিকায়নের দাবি দীর্ঘদিনের।

কেন নারীরা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন?
বাস্তব চিত্রটি বেশ জটিল। এর পেছনে কিছু বহুস্তরীয় কারণ বিদ্যমান:

সামাজিক ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা: অনেক পরিবারেই বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে যে, মেয়েরা বিয়ে হয়ে গেলে পরের বাড়ির সদস্য হয়ে যায়, তাই বাবার সম্পত্তিতে তাদের কোনো দাবি থাকা উচিত নয়।

নিকটাত্মীয় ও ভাইদের অন্যায্য হস্তক্ষেপ: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাইয়েরা বা অন্য পুরুষ আত্মীয়রা বিভিন্ন কৌশল, চাপ প্রয়োগ বা জালিয়াতির মাধ্যমে বোনদের অংশ দখল করে নেন।

আইনি জ্ঞানের অভাব ও আর্থিক সংকট: অধিকাংশ নারীই তাদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে পুরোপুরি জানেন না। জানলেও, মামলা পরিচালনার মতো আর্থিক সামর্থ্য বা মানসিক জোর তাদের থাকে না।

পারিবারিক সালিশের চাপ: প্রায়শই পারিবারিক বা সামাজিক সালিশের মাধ্যমে নারীদের সামান্য কিছু অর্থ দিয়ে বা আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তাদের অধিকার ত্যাগে বাধ্য করা হয়।

বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা: মামলা করা মানেই দীর্ঘ সময় ও অর্থের অপচয়—এই ভয়ে বহু নারী আইনি লড়াইয়ের পথে হাঁটার সাহস পান না।

আইনি প্রতিকার লাভের উপায়ঃ
অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে হতাশ না হয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক প্রস্তুতি এবং কিছু ধাপ অনুসরণ।

১. মামলার প্রস্তুতি: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আইনি লড়াই শুরু করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র সংগ্রহ করা আবশ্যক:
 * উত্তরাধিকারীর পিতা/মাতার মৃত্যু সনদ।
 * সম্পত্তির মালিকানার প্রমাণপত্র (যেমন: সাফ কবলা দলিল, সিএস/এসএ/আরএস খতিয়ান, নামজারি বা মিউটেশন খতিয়ান)।
 * ওয়ারিশান সনদ (স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন থেকে সংগ্রহ করতে হয়)।
 * দাবিযোগ্য সম্পত্তির পূর্ণাঙ্গ তালিকা।
 * প্রয়োজনে পারিপার্শ্বিক সাক্ষী হিসেবে প্রতিবেশী বা知াসম্পর্কের আত্মীয়দের সমর্থন।
এই সকল কাগজপত্র একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে প্রস্তুত রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

২. আদালতে মামলা পরিচালনার ধাপ
 * আদালত নির্ধারণ: সাধারণত বাটোয়ারা বা অংশীদারিত্বের মামলা এখতিয়ারসম্পন্ন দেওয়ানী আদালতে (সহকারী জজ কোর্ট) দায়ের করতে হয়। সম্পত্তির মূল্যমান অনুযায়ী কোর্টের এখতিয়ার ভিন্ন হতে পারে।
 * দাবি বা আরজি দাখিল: আইনজীবী মারফত সম্পত্তির ওপর নিজের দাবি প্রতিষ্ঠা করে লিখিত অভিযোগ (আরজি) আদালতে জমা দিতে হয়।
 * প্রতিপক্ষের জবাব: আদালত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিবাদীকে তলব করলে, তিনি তার লিখিত জবাব দাখিল করেন।
 * সাক্ষ্য ও প্রমাণাদি যাচাই: আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনেন এবং তাদের উপস্থাপিত দলিলপত্র ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ ও যাচাই করেন।
 * স্থানীয় তদন্ত: প্রয়োজনে আদালত সরেজমিনে সম্পত্তির অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য আইনজীবী বা সার্ভেয়ারের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করতে পারেন।
 * চূড়ান্ত রায়: সকল সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে আদালত তার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন।
রায় পাওয়ার পর সেই রায়ের বলে সম্পত্তির দখল বুঝে পেতে প্রয়োজনে উচ্ছেদ বা দখল পুনরুদ্ধারের জন্য আলাদা মামলা (Execution Case) করার প্রয়োজন হতে পারে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইন ও মামলার উদাহরণ
নারীর সম্পত্তি অধিকার সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইন হলো:
 * মুসলিম পার্সোনাল ল’ (শরীয়ত) অ্যাপ্ট, ১৯৩৭
 * মুসলিম উত্তরাধিকার অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১
 * সাকসেশন অ্যাক্ট, ১৯২৫
 * হিন্দু উইমেন্স রাইট টু প্রপার্টি অ্যাক্ট, ১৯৩৭
 * দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ (Civil Procedure Code, 1908)
বাস্তব উদাহরণ থেকে দেখা যায়, আইনগতভাবে লড়াই করলে সফলতা সম্ভব। যেমন: ফাতেমা বেগম বনাম তার ভাইয়েরা (ঢাকা সিভিল কোর্ট, ২০১৮) মামলায় ভাইয়েরা বোনকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলেও, আদালত দলিলপত্র যাচাই করে তার ন্যায্য অংশ ফিরিয়ে দেওয়ার রায় দেন।

কোথায় পাবেন আইনি সহায়তা?
আর্থিক অসচ্ছলতা বা অন্য কোনো কারণে মামলা পরিচালনায় অক্ষম নারীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আইনি সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। কিছু উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলো:
 * জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা (ফ্রি আইনি সহায়তার হটলাইন: ১৬৪৩০)
 * বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
 * আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)
 * জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি
নারীর পৈতৃক সম্পত্তিতে অধিকার প্রতিষ্ঠা শুধু একটি আইনি লড়াই নয়; এটি তার অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক মর্যাদা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। সচেতনতা এবং সাহসের মাধ্যমে এই পথে এগিয়ে যাওয়াই সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ার অন্যতম শর্ত।

 লেখক ও সূত্র প্রসঙ্গ: এই ব্লগ পোস্টটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের তথ্যের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। মূল প্রতিবেদনের লেখক ছিলেন শিক্ষানবিশ আইনজীবী অর্ক রায়। আইনি তথ্যের সংবেদনশীলতা ও নির্ভুলতা রক্ষার্থে মূল প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

×